
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যৌথ অংশীদার হতে না পারলেও সেই মাতারবাড়ি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। এই দুই দেশের প্রতিযোগিতার কারণে দীর্ঘদিন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাপানের অর্থায়নেই হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার এই বন্দর। আর প্রতিযোগী দুই দেশকে হাতে রেখে তৃতীয় একটি দেশকে দিয়ে বন্দর নির্মাণের কৌশলকে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে শুরু হবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবেশী এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর অংশীদারিত্ব জটিলতায় এক যুগ ধরেই থমকে ছিল গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত। প্রথম দিকে ভারত ও চীন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহী হওয়ায় ‘ধীরে চলো নীতি’ কৌশল নেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত দরপত্রে দুই দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আসে জাপান।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক দিক মূল্যায়নের পর ভারত, চীন ও নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে এ প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে জাপান।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের জাইকার ঋণসহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থ বন্দরের নিজস্ব তহবিল ও সরকার অর্থায়ন।
ভূরাজনৈতিক জটিলতার পাশাপাশি নানা সমীকরণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। শেষ পর্যন্ত জাপানের অর্থায়নেই হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার এই বন্দর। অংশীদারিত্ব না পেলেও ভারত-চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যবহারে মাতারবাড়িকে উন্মুক্ত রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন,
এই নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করলে হয়তো সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তখন এটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনের চলে যাবে। এটির মাধ্যমে শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবেন, তা কিন্তু নয়। বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি এই বন্দরের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
তবে ভারত ও চীনের মতো ক্ষমতাধর দুটি রাষ্ট্রকে আস্থায় নিয়ে জাপানকে দিয়ে মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনাকে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন,
গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে ভারত ও চীনের আগ্রহ ছিল। জাপানের দায়িত্ব পাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে গেছে। যেটি বাংলাদেশের একটি দারুণ কূটনৈতিক কৌশল।
মূলত মাতারবাড়িতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ করছে জাপান। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লাবাহী জাহাজ ভেড়াতে জাপানি প্রতিষ্ঠান নিজেই একটি জেটি নির্মাণ করে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই নতুন আরও দু’টি জেটি নির্মাণের মধ্য দিয়েই শুরু হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মাতারবাড়ি নতুন চ্যানেলের উদ্বোধনের পাশাপাশি ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচের গভীর সমুদ্রবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।