
‘মানুষেরও যে আকাশের মতো, হৃদয় থাকতে পারে, তাকে না দেখলে হয়তো বুঝি জানাই হতো না’ বিখ্যাত এই বাংলা গানের দৃশ্যমান রূপ খুঁজে পাওয়া যে মানুষটার মাঝে তিনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। যিনি নিজ কর্মগুণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শিশুদের জন্য নতুন ভোর উদিত করেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত দয়াশীল হৃদয়; পিতা ওয়াজেদ আলী মিয়ার মত নিভৃতচারী প্রচার বিমুখ জীবন; মাতা শেখ হাসিনার মত দৃঢ় চিন্তাশীল মননের সংমিশ্রণে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল হয়ে উঠেছেন স্বীয় কর্মে বিশ্ব স্বীকৃত সফল নারী।
এ পুতুল সেই পুতুল, যিনি ভালোবাসেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষগুলোকে। যারা সমাজে প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃত। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যে মানুষগুলো বেঁচে থাকে, তাদের মুখে হাসি ফোটানোই এ পুতুলের নেশা। তিনি হলেন ।
১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’র ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে ‘স্কুল সাইকোলজি’র ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়েই তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার ‘একাডেমি অব সায়েন্স শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা’ হিসেবে স্বীকৃত হয়।
২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। প্রথমে বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ শুরু করেন তিনি।
পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালে, অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে ‘সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ২০১৩ সালের জুন থেকে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে World Health Organization’এর ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশে ‘Neuro Development Disability Trust Act 2013’ পাস হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে ‘হু এক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন।
অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য ফ্লোরিডার মায়ামিতে, ব্যারি ইউনিভার্সিটি ‘ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করেছে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে।
বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।
২০১৯ সালে ‘গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম কনসোর্টিয়াম’এ প্রকাশিত ১০০ সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের তালিকাতেও স্থান পেয়েছেন বাংলার এই মহীয়সী নারী। এছাড়া ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন এই বঙ্গকন্যা।
ব্যক্তিজীবনে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ৩ কন্যা ও ১ পুত্রের জননী। আজ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া পুতুল ৫১ বছরে পা দিলেন। শুভ জন্মদিন হে মহীয়সী নারী। আপনার আগামী দিন হোক আরও সাফল্যময় রইলো এই কামনা।