
মাঝপথে ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৭০০ ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে সময় মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) খুলে রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে লাগানো হয়। এরপরই সব শিক্ষার্থী পান ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে, পশ্চিমাঞ্চলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি পোস্ট দেন জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার। এরপর তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা প্রথম দিন মঙ্গলবার ছিল বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে রাজশাহীগামী ট্রেন ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠে পড়েন। তবে লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে বিকল হয়ে যায় ট্রেনটি। এতেই বাধে বিপত্তি; দুশ্চিন্তায় পড়েন পরীক্ষার্থীরা। পরে প্রায় ৭০০ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সময় মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) খুলে রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে লাগানো হয়।
শুধুমাত্র পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার কারণে পরীক্ষার হলে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় বসতে পেরেছিলেন ৭০০ শিক্ষার্থী।
অসীম কুমার তালুকদার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘৫ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এটাকে পরীক্ষা না বলে ভর্তিযুদ্ধ বলা যেতে পারে। প্রায় ৭০০ ছাত্রছাত্রী মঙ্গলবার ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঢাকা থেকে এসে বিকেল সাড়ে ৩টার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। তবে রেল ব্রোকেনের জন্য ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ঢাকা থেকে বিলম্বে রওনা হয়। বেলা ১১টায় হিসেব করে দেখা গেল, ট্রেনটি বিকেল ৩টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছাবে। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ট্রেনটি অন্য ট্রেনগুলোকে বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে আনি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ভাগ্য এতোই খারাপ, লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন বিকল হয়, চাকা ঘুরছে না। কী করা যায়? পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে থাকা ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে এনে ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেন আবার চালু করলাম। হিসেবে করে দেখলাম, ট্রেনটি বিকেল ৪টায় রাজশাহী পৌঁছাবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। রাবির ভিসিকে পরীক্ষার সময় পেছানোর বিনীত অনুরোধ করলাম। তিনি আমাকে প্রায় ৪ বার ফোন করে ট্রেনের খবর নিলেন।’
‘ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে, দুশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপায় না দেখে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে সোজা পাস করলাম। ঈশ্বরকে খুব একটা ডাকি না, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জোড়ে জোড়ে ডাকা শুরু করলাম, একটু মানতও করলাম। ঈশ্বর মনে হয় সদয় হলেন।’
‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দিলাম বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে। হলে ঢুকতে হবে ৪টার মধ্যে। ভিসির বিনীত অনুরোধ করলাম, ছেলেমেয়েদের হলে ঢোকার সুযোগ দেয়ার জন্য। তিনি কথা রাখলেন এবং রেলওয়ের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। ট্রেন পরিচালনায় পাকশী কন্ট্রোলে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করেন ডিআরএম (পাকশী)। এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।’
৫ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এই তিন দিনব্যাপী চলবে ভর্তি যুদ্ধ। প্রতিদিন চারটি শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩টি অনুষদের ৫৯টি বিভাগে মোট আবেদন পত্র জমা পড়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০টি। মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৮টি। সেই হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ৪২ জন শিক্ষার্থী।