Homeসারাদেশনিরাপদ খাবার তুলে দিচ্ছে পেস্টিসাইড অ্যানালাইটিক্যাল গবেষণাগার

নিরাপদ খাবার তুলে দিচ্ছে পেস্টিসাইড অ্যানালাইটিক্যাল গবেষণাগার

নিরাপদ খাবার সুস্থ ভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন হলেও আমাদের দেশের উৎপাদন পর্যায়ের কৃষকদের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় অনেক সময় খাবার নিরাপদ থাকছে না।

সরকার ভোক্তাদের হাতে নিরাপদ খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের (বারি) কীটতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছিল পেস্টিসাইড অ্যানালাইটিক্যাল গবেষণাগার। দেশের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ১৮ বছরে প্রায় ৫০টি প্রযুক্তি ও দেড় হাজার বাণিজ্যিক বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে এই গবেষণাগারে।

এই গবেষণাগারটি দেশের একমাত্র আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাগার। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে এ গবেষণাগারটি আইএসও সনদ লাভ করে। আমাদের দেশ থেকে বিদেশে চিংড়ি মাছ, পান, তিল, তিসি ও চায়ের রপ্তানির ক্ষেত্রে এ গবেষণাগারের সনদ প্রয়োজন হয় রপ্তানিকারকদের।

বারি‘র পেস্টিসাইড অ্যানালাইটিক্যাল গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দেওয়া তথ্য মতে, আর্ন্তজাতিক মানের এ গবেষণাগারের মূল লক্ষ্যই হলো ভোক্তাদের হাতে নিরাপদ খাবার তুলে দেয়া পথ তৈরি করা। আমাদের দেশীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফল ও ফসল রোগবালাই এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা ও উৎপাদন ধরে রাখতে রাসায়নিক বালাইনাশকের মতো কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করে থাকে।

এ সমস্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে নানারকম বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। বালাইনাশক ব্যবহারের পর অপেক্ষমাণ একটি সময় রয়েছে, নির্ধারিত করা আছে কতদিন ফল ও ফসল হারভেস্ট করে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছানো যাবে। কিন্তু কৃষকরা ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই ফল ও ফসল ভোক্তাদের সামনে নিয়ে আসে। যার ফলে ফল ও ফসলে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকেই যায়। যা খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা ক্ষতি হচ্ছে।

এ গবেষণাগারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বালাইনাশক ব্যবহারের অপেক্ষমাণ সময় অনেক কমিয়ে এনেছেন, কোনো ধরনের বালাইনাশক ব্যবহারের পর কতদিন পর নিরাপদ ফল-ফসল হারভেস্ট করা যাবে সে সময়টায় বের করেছেন গবেষকরা। সঙ্গে ফল-মূল ও শাকসবজি থেকে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণের পদ্ধতিও দেশের কৃষক সম্প্রদায় ও ভোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে নিরাপদ খাবারের জোগান নিশ্চিত করতে পথ তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সুলতান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের গবেষণার মূল বিষয় হলো নিরাপদ খাবারের জোগান। ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় ৫০টি পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে সারাদেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। এর ফলে কৃষকরা নিরাপদ সবজি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে আমরা সেমিনার ও প্রশিক্ষণও দিয়েছি। এছাড়া আমাদের গবেষণায় বালাইনাশক ব্যবহারের পর অপেক্ষমাণ সময় কমিয়ে আনতে পেরেছি। আমরা ইচ্ছে করলেই বালাইনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারব না, তবে বালাইনাশক ব্যবহার করেও নিরাপদ খাবার ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি এ গবেষণার মাধ্যমে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গবেষণাগারটি আর্ন্তজাতিক মানের। পাঁচ জন বিজ্ঞানী নিরলসভাবে কাজ করছেন। গাজীপুরের এই গবেষণাগারে সফলভাবে ৩টি আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণও হয়েছে।

এ পদ্ধতির মাধ্যমে একজন ভোক্তা ইচ্ছে করলেই তার নিত্যদিনের বাজারের তালিকায় থাকা ফল-মূল, শাকসবজি থেকে বাইলানাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করতে পারেন। এ গবেষণাগারের উদ্যোগে এমন একটি সহজলভ্য পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে এ পদ্ধতির মাধ্যমে ৬০-৮০ভাগ বালাইনাশক দূর হয়ে যায়। বাজার থেকে ক্রয় করা ফল-মূল, শাকসবজি একটি গামলায় এক লিটার পানিতে দুই চামচ দ্রবণ তৈরি করে তাতে ১৫ মিনিট চুবিয়ে রাখলেই বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে আমাদানিকৃত আঙ্গুর, আপেলসহ বিভিন্ন ফলমূল কুসুম গরম লবণের দ্রবণ তৈরি করে ১৫ মিনিট রেখে দিলে তাতেও বালাইনাশক দূর হয়। এছাড়াও ভিনেগারের মাধ্যমেও বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণ করা যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল কুমার দত্ত বলেন, আমাদের কৃষকরা যাতে ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ ফল ও ফসল তুলে দিতে পারে সেজন্যই আমাদের গবেষণা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যেই আমরা নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকদের দিয়েছি। তারা এ পদ্ধতির প্রয়োগ করে ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন। এটি আমাদের নিরাপদ খাবারের জন্য এক মাইলফলক।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন