Home স্বাস্থ্য জুলাইয়ে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ

জুলাইয়ে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ

0
জুলাইয়ে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ
ছবিঃ সংগৃহীত
গত বছরের তুলনায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা কম। তবে মৃত্যুর হার দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ৩১৫ জন।

তাদের মধ্যে মারা গেছে ৪১ জন। অর্থাৎ প্রতি ৮১ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে প্রতি ১৫৬ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছিল।

তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪১ জনের মধ্যে ২৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।

এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মৃত্যু হয় ২৫ জনের। উত্তর সিটিতে চারজনের। ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ আটজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল বিভাগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই কারণে ঢাকায় মৃত্যু বেশি।

এক. ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের বড় অংশই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার সংক্রমিত হচ্ছে। দুই. অনেক ক্ষেত্রেই গুরুতর রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সংক্রমণ কমানো না গেলে মৃত্যুও ঠেকানো সম্ভব হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে এ বছর তিনটি ধরনই সক্রিয়। ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার এটিও একটি কারণ।

প্রথমবার আক্রান্ত হলে তত বেশি সমস্যা হয় না। অনেকে বুঝতেই পারে না। কিন্তু দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা চতুর্থবার আক্রান্ত হলে রোগী ভয়ংকর অবস্থায় চলে যেতে পারে।’

ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ঢাকায় বেশির ভাগ মানুষের প্রথমবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। অনেকে আছে যাদের এরই মধ্যে চারবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। তবে সবারই কিন্তু চারবার হয়নি। দ্বিতীয় বা আরো বেশিবার আক্রান্ত হলে অনেকের অবস্থা খারাপ হতেই পারে। সে কারণে বলা যায়, এবার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে মৃত্যু বাড়ার আশঙ্কাও বেশি।

’জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রকোপ ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা

কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এখনকার বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা দুটিই এডিস প্রজননের জন্য উপযোগী। ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের শেষ ভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘দীর্ঘদিন মশা নিয়ে গবেষণা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এ বছর ডেঙ্গু বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের কিছু জেলায় যেমন চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও খুলনায় ডেঙ্গুর ব্যাপক সংক্রমণ হতে পারে।’

মৃতদের ৫৩ শতাংশ ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সী

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের ৫১.২ শতাংশ নারী এবং ৪৮.৮ শতাংশ পুরুষ।  শূন্য থেকে ২০ বছরের কম বয়সে মৃত্যু ২২ শতাংশ। ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সে মৃত্যু ২৪.৩৫ শতাংশ এবং ৪০ ঊর্ধ্ব মৃত্যু ৫৩.৬৫ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি প্রতি ১০০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নারীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার প্রতি ৬৩ জনে একজন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিপরীতে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা খুব অপ্রতুল। গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে উঠলেও সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ জনবল-সরঞ্জাম নেই। শহরাঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো গড়ে ওঠেনি। অর্থাৎ মানুষের হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নেই। তাই অসুখ হলেই লোকে বড় বড় হাসপাতালে ভিড় করছে। চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া মৃত্যু কমানো সম্ভব নয়।’

ডা. মুশতাক হোসেন আরো বলেন, কোনো দেশে ডেঙ্গু একবার শুরু হলে তা শেষ হয়ে যায় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু সে জন্য জরুরি সমন্বিত উদ্যোগ নেই। জনসম্পৃক্ততা নেই। এটি যত দিন করা না যায় মৃত্যু বা আক্রান্ত হওয়া কোনোটাই কমানো সম্ভব নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here