Homeসারাদেশকউক ও সিএসসির মধ্যে চুক্তি সই

কউক ও সিএসসির মধ্যে চুক্তি সই

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসাল্টেন্টের (সিএসসি) মধ্যে কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কউকের মাল্টিপারপাস হলরুমে এ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।

চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কউক-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার, লে. কর্নেল মো. খিজির খান, সদস্য (প্রকৌশল) লে. কর্নেল তাহসিন বিন আলম, এবং উপনগর পরিকল্পনাবিদ ও “কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. তানভীর হাসান রেজাউল, সিএসসি’র ডিরেক্টর (প্ল্যানিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ-আল-মামুন ও “কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল সাদেক মাহমুদ।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন “কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজার জেলার মোট ০৮ (আট) টি উপজেলা (চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ) এবং সমুদ্র সৈকত এলাকাসহ মোট ৬৯০.৬৭ বর্গ কি.মি. এলাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান এবং সমগ্র কক্সবাজার জেলার মোট ২৪৯১.৮৩ বর্গ কি.মি. এলাকার জন্য স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।

প্রকল্পটি ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোট ১৭৪.৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদিত হয় এবং ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টকে (সিএসসি) নিযুক্তকরণের বিষয়টি গত ১৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদিত হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল এপ্রিল ২০২১ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। “কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পটির সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো কক্সবাজার ও উহার সন্নিহিত এলাকা সমন্বয়ে একটি আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী প্রতিষ্ঠাকল্পে ভূমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ভূমির ওপর যেকোনো প্রকৃতির অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ এবং উক্ত অঞ্চলের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানসহ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় টেকসই যাতায়াত ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পাহাড়, বন, জলাশয় ও সমুদ্র অঞ্চল সংরক্ষণ, সমুদ্র সৈকতের নির্দিষ্ট সীমানা সংরক্ষণ, অবৈধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা অপসারণ, জল ও স্থলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্য ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, সকল প্রকার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন সুবিধা নিশ্চিতকরণ, আবাসন ব্যবস্থা বিষয়ক পরিকল্পনা, সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন ও ভূমিক্ষয় রোধকরণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন অঞ্চলের মাস্টার প্ল্যান (২০২৩-২০৪৩) নিম্নলিখিত উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যাহার এলাকাভিত্তিক পরিধি/আয়তন/ব্যাপ্তি/ প্রকার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করেছে। কর্মপরিধির উপাদান সমূহের মধ্যে রয়েছে- কৌশলগত পরিকল্পনা, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান- কক্সবাজার জেলাধীন সকল উপজেলা এবং সমুদ্র সৈকত এলাকায় (৬৯০.৬৭ বর্গ কি.মি.), ভূমি ব্যহার পরিকল্পনা, পর্যটন উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেক্টোরাল প্ল্যান ।

সেক্টোরাল প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে- এ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান, পরিবহন প্ল্যান, ঝুঁকি সংবেদনশীল ও ভূমি ব্যবহার প্ল্যান, আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা প্ল্যান, আপদকালীন সংকট ব্যবস্থাপনা প্ল্যান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্ল্যান, কক্সবাজারের জন্য র্স্মাট সিটি মডেল, নতুন শহর উন্নয়ন পরিকল্পনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্ল্যান, ইউটিলিটি এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (গ্যাস,বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, পুনর্বাসন, আবাসন, উন্মুক্ত এলাকা/চিত্তবিনোদন ইত্যাদি)।

বাংলাদেশ জনসংখ্যার ঘনত্বে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্বে অন্যতম। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ৩০% এরও বেশি লোক বাস করে, যা ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৫০% হবে বলে ধারনা করা হয়। বর্তমানে কক্সবাজারে দ্রুত বর্ধমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য জমির উচ্চ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কোন উন্নয়ন নির্দেশিকা (মাস্টার প্ল্যান) অনুপস্থিতির কারণে উন্নয়ন কাযক্রমগুলি অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে উঠছে। মাস্টারপ্ল্যান সরকার এবং জনগণ উভয়ের আকাঙ্খা পূরণ করবে। সরকার এবং জনগণ উভয়ের কাছ থেকে সম্মিলিত দৃষ্টি যত ভাল সংযুক্ত করা হবে তত বেশি বাস্তবাবাদী এবং বাস্তবায়নযোগ্য হবে। এটি অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হবে এবং মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সময় বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব হ্রাস করবে। সুতরাং এই মহাপরিকল্পনা কেবল ভূমি ব্যবহার, জল ও স্থল এলাকা, ‍উচ্চতা সীমাবদ্ধকরণ এবং জমির প্লটের জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে নয় বরং মেগা প্রকল্প সমূহ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (অর্থবছর ২০২০-২০২৫), এসডিজি, সুনীল অর্থনীতি, রূপকল্প-২০৪১ ও ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সমন্বয়করণ।

পরিকল্পিত নগরী ও পর্যটনের টেকসই বিকাশ ও পুনরুদ্ধারের নিমিত্তে জেলার সকল অংশীজন ও জনগণের জনসম্পৃক্ততায় প্রণয়ন হবে জনবান্ধব মহাপরিকল্পনা। এতে করে বাস্তববাদী এবং বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভবপর হবে। সকল সুবিধাকে মাথায় রেখে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং কক্সবাজারের আর্থ-সামাজিক তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে এই মহাপরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশের পর্যটনের সার্বিক উন্নয়ন ও বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ থাকবে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তথা আত্মনির্ভরশীল স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নালু দর্শন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নদর্শী পদক্ষেপ আমাদেরকে উপহার দিতে চলেছে সুন্দর সোনালী এক রোলমডেল “টেকসই পর্যটন নগরী।’

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন