
তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। বাংলাদেশের তিস্তার উৎপত্তিস্থল ভারতের সিকিম রাজ্যে। প্রবল বৃষ্টির কারণে উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক লেকে ফাটল ধরে পানির চাপ বেড়ে আঘাত হানে চুংথাম বাঁধে। পানির চাপে সেই বাঁধ ভেসে যায় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এরফলে ওই পানি তিস্তা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তার পানির স্তর প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট বেড়ে গেছে। যার কারণে তিস্তা দিয়ে পানি হু হু করে ঢুকছে বাংলাদেশের উত্তরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে।
এরইমধ্যে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল ৫২.৪০ মিটার। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে। মধ্যরাত নাগাদ তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপরে ওঠার আশঙ্কা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে নদী এলাকায় সতর্কীকরণ জারি করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকিং করেছে ; সেইসঙ্গে সতর্কতা অবলম্বনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা জারিও করা হয়েছে।
এদিকে তিস্তা তীরবর্তী মানুষজন অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয়ে ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও নামমাত্র কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)
প্রতিবারের মতো এবারও পাউবোর পক্ষ থেকে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে তা খুব একটা কাজে আসছে না। পানি বেড়ে অনেক রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে যে কোনো সময় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার রাস্তা ভেঙে শহরে পানি ঢুকে যেতে পারে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তীরবর্তী বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিকেল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সেখানকার মানুষজন।
স্থানীয়রা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, সকাল থেকে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। এতে সর্বসাধারণকে তাদের গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বা প্রাইমারি অথবা হাইস্কুলে অবস্থান নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, আশা করা হচ্ছে রাতেই পানি কমে যেতে পারে। পানি কমে গেলে তিস্তা পাড়ের মানুষরা আবারও ঘরে ফিরে যেতে পারবেন বলে আশা রাখছি।