কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতায় গাজীপুরের ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনে নাশকতার চিহ্ন এখনো দেখা যাচ্ছে। হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেইট ও ভবনসহ চারটি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার অন্যান্য মালামাল ভাংচুর করে। এতে দুই কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রবিবার (২৮ জুলাই) বিকালে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা চলাকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙ্চুর করা হয়েছে আরও ১৩টি যানবাহন। এরমধ্যে জিপ গাড়ি তিনটি, পিকআপ পাঁচটি, ড্রাম ট্রাক ১৮টি, কম্পক্টর একটি, মোবাইল কোর্ট গাড়ি একটি, বিদ্যুত বিভাগের গাড়ি দুটি, হুইল লোডার একটি এবং টেম্পু একটি। এছাড়া গাজীপুর সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙ্চুর এবং নিচতলার তিনটি কক্ষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা জানালা ও ভাংচুর করা হয়।

জেলা প্রশাসক জানান, কয়েকদিনের আন্দোলনে নাশকতাকারীরা মহানগরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তবে হামলাকারীরা সরকারি অফিসকে কেন্দ্র করে নাশকতা করেছে।

হামলাকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তার পুলিশ বক্সের টিনের চাল, চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে এবং কোনাবাড়ী এলাকার পুলিশবক্সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, এর পাশেই সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের ভেতরে রাখা চারটি গাড়িতেও তারা আগুন দেয়। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোয় রাখা এসকেলেটরগুলোর আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ কার্যালয়ের মূল ফটকের পাশে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্র বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার দুটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে আগুনে পোড়া আসবাবপত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র। কক্ষের সামনে সারিবদ্ধভাবে রাখা ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এছাড়া হামলায় বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এক্সেলেটর, দুই হাজার বর্গ মিটার এসএস রেলিং, একটি এস্কাভেটর, ৩ হাজার কেজি এমএসইওয়াল প্যানেল ফর্ম ওয়ার্ক, ছয়টি ইলেকট্রিক হ্যামার, চারটি ওয়েল্ডিং মেশিন, দুটি রোড-কাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, সাতটি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাংচুর করে ৩ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মা’র ভেতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাংচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙ্চুর করে এপিসি গ্লাস ভেঙে ফেলে। এতে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী পশ্চিম ও গাছা থানায় ইটপাটকেলে ছুড়ে ভাঙ্চুর করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুব আলম জানান, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে থানা ও পুলিশ বক্সে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় আমাদের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবনের জানালার গ্লাসও ভাংচুর করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম জানান, আন্দোলনকারীরা সিটি কর্পোরেশেনের যানবাহনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙ্চুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।