নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চান না, অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ফতুল্লার ভুইগড়ে একটি স্কুলে দোয়া মাহফিলে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

জো বাইডেনের এই দ্বিমুখী অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘আজকে একটা চমৎকার নিউজ দেখলাম। চীনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গেছেন। সান ফ্রান্সিসকোয় জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট মিস্টার শি জিনপিং এর সঙ্গে একটা আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাইডেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে চীনকে হস্তক্ষেপ না করতে বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্টকে বলছেন আমাদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে আপনারা কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। সঠিক কথাই বলেছেন। সেখানকার জন্য যদি এই কথা সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয় কেন?’

শামীম ওসমান বলেন, এই বিষয়টা বুঝতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি অবাক এবং বিস্মিত হচ্ছি। বাইডেন যেটা বলেছেন সেটা সঠিক এবং যুক্তিসঙ্গত কথা। আমার দেশের নির্বাচন অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করবে কেনো ?

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন স্বার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। পৃথিবীর কারো দয়াতে স্বাধীন হয় নাই। এদেশের ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে এবং দুই লাখ মা বোন সম্ভ্রম দিয়েছে। এর পরে যদি কেউ দাবিদার থাকে সেটা হচ্ছে ভারত। ইন্ডিয়া আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের যুদ্ধে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়েছে। এয়ার এ্যাটাক করেছে এবং ইন্ডিয়ার হাজার হাজার সোলজার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছে। পাঞ্জাব বর্ডার দিয়েও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয়েছে। তাই আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের স্মরণ করি।’

তিনি বলেন, ‘ভেগোলিক সীমারেখার কারণে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইন্ডিয়ার কাছে। কারণ ২০০১ এর পরে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির যে উত্থান হয়েছিল তখন আইএস এবং তালেবানদের ঘাঁটিও পাওয়া গিয়েছিল। তাছাড়া ভারতের বিচ্ছিন্নিতাবাদী আন্দোলনের উলফা বাংলাদেশে তাদের প্রধান ঘাঁটি করেছিল। সেই ঘাঁটির জন্য যুদ্ধ জাহাজ ভরে অস্ত্রের চালান এসেছিল। সেই জাহাজের মধ্যে একটি জাহাজ আটক হয়েছিল যা সবাই জানেন। সেই কারণে ভারত তার নিজের দেশের শান্তির জন্য কথা বলতে পারে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূমিও কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হয়নি উল্লেখ করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এই কারণে বর্হিবিশ্বে আমাদের সম্মান আছে। এখন আরেকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এসে অবস্থান নিয়েছে। ভৌগোলিক সীমারেখার কারণে এদেরকে কাজে লাগিয়ে এই জায়গাকে কেন্ট্রাল করার জন্য কিছু শক্তি অভ্যন্তরীণভাবে প্রবেশ করতে চায়। সেই সুযোগটাই তারা নিতে চাচ্ছিল। বিএনপি-জামায়াত বিদেশিদের সেই সুযোগ করে দিতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।’

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘সে অলরেডি কনভিক্টেড। সে কাপুরুষ। সে তার নিজের মায়ের খবর নেয় না দেশের খবর কি নিবে। লন্ডনে পালিয়ে থেকে বাংলাদেশে নাশকতার নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে তার সম্পর্কে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্ট কি। তাই ইনশাল্লাহ নির্বাচন পিসফুল হবে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পরে এবং জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’

নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা বা আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ কবে করবেন সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি সারা বছরই মাঠে থাকি। আমাদের নতুন করে গণসংযোগের দরকার হয় না। বাংলাদেশে এমন কোন পরিবার নাই যে পরিবারে আওয়ামী লীগের একটা কর্মী নাই। আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাহিদাগুলো পূরণের চেষ্টা করেছি। আমরা বড় বড় অনেক কাজ করেছি। মানুষ যেটা চায়। যেহেতু কাজ করেছি তাই আমার বিশ্বাস মানুষ আমাদের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবে। যদি আরেকবার আসতে পারি নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আমার কিছু স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো ইনশাল্লাহ।’