Homeজাতীয়উন্নয়নে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি পালক, বছরে সাশ্রয় হবে তিন হাজার কোটি টাকা

উন্নয়নে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি পালক, বছরে সাশ্রয় হবে তিন হাজার কোটি টাকা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

একেবারে পাকা হিসাব না থাকলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালু হলেই বছরে সাশ্রয় হবে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একদিকে তৈরি হচ্ছে নতুন সড়কে উন্নয়ন হবে যোগাযোগ ব্যবস্থার, অন্যদিকে বাঁচবে কর্মঘণ্টা, আর সাশ্রয় হবে জ্বালানি। সব মিলিয়ে এগারো কিলোমিটার এ পথের প্রভাব নেহাত কম নয় , বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

তর সইছে না যেন আর! দিনের হিসাব শেষ, এখন কেবল অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার। এর পরই (শনিবার) উদ্বোধন হবে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ে। এ দফায় আংশিক চালু হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত। যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে রোববার।

যানজটযুক্ত রাজধানীর এ পথে চলার গতি যেখানে গড়ে ১০ কিলোমিটারের কম, সেখানে ৬০ কিলোমিটার গতিতে এ ১১ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ মিনিট। তাইতো অপেক্ষা এবার দিন বদলের!

একটি আদর্শ নগরে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ চলাচলের সড়ক থাকার কথা থাকলেও কথিত তিলোত্তমা এ ঢাকায় তা মাত্র সাত ভাগ। তাই উড়াল এ সড়ক হিসাবের খাতায় যুক্ত করবে নতুন পথ।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা মিনিবাস যখন এলিভেটেড অংশে চলে যাবে তখন নিচের পথের চিরচেনা যানজটের দৃশ্য হয়ত অনেকটাই বদলে যাবে। এক্সপ্রেসওয়েটি ব্যবহার করলে বনানী, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণির ভয়াবহ যানজট থেকে মুক্তি মিলবে এ পথের যাত্রীদের।

কাজেই সহজ সমীকরণ। যান চলাচলের দিন থেকে এ পথে কর্মঘণ্টার অপচয় কমে আসবে নগরবাসীর। আবার সাশ্রয় হবে ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকা বাহনের জ্বালানি। সব মিলিয়ে এক পঞ্জিকায় টাকার অঙ্কে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার কম সাশ্রয় দেখছেন না সাবেক সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন।

তার মতে, শেষাবধি বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের পুরো অংশ চালু হলে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। তবে এ পথের শতভাগ সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেইজ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট প্রান্ত পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ পথের দূরত্ব ১১.৫ কিলোমিটার। র‍্যাম্পসহ এ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র‍্যাম্প রয়েছে ১৫টি, যার মধ্যে বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। এর মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি। প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার ও ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। এর ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭.২৮ শতাংশ। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ধাপে ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪.২২ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। আর তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।

প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে এর একাংশ। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন