Homeঅন্যান্যবঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়। এই যুদ্ধে দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ফলে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজ খচিত পতাকার বাংলাদেশ স্থান করে নেয়। আবহমান বাংলার চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যই হলো সম্প্রীতি। অত্র অঞ্চলের জনগোষ্ঠী প্রাচীনকাল থেকেই ছিল অসাম্প্রদায়িক। সম্প্রীতিযুক্ত সহাবস্থান ছিল সবসময়।

বিংশ শতকে এ বাংলায় সম্প্রীতির এমনই এক প্রবাদপুরুষ হলেন মানবতাবাদী, শান্তিকামী ও অহিংস চেতনার মূর্ত প্রতীক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ স্বাধীন করার পর জাতির পথপ্রদর্শক স্বরূপ। তিনি এদেশের গণমানুষের অধিকারের দলিল হিসেবে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। যে সংবিধানে, বঙ্গবন্ধু যে পুরোধা অসাম্প্রদায়িক ছিলেন তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ফলে এদেশের মানুষ পেয়েছে আত্মপরিচয়ের গৌরব। সংবিধানের চারটি স্তম্ভ হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রধান দেশে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবর্তন ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন। বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ধর্মহীনতা বোঝাননি। বরঞ্চ ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান ও পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাকে বুঝিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক এবং অভিন্ন করে দেখেছেন। সম্মান করেছেন। শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। তিনি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে (পৃ. ১৯১) বলেছেন—‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। সকলেই মানুষ’। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার মতো অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর কাছে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে সোনার বাংলা রূপান্তরে সব সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাও পিতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে জাতির পিতার ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’-কে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশে বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আস্থার ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারা জানে এদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নিরাপদ ও শান্তিতে থাকা যায়। শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে সবসময় বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের সবচেয়ে প্রাচীন একটি রাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়। এই নামকরণের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন। যে সংগঠনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। বর্তমানে সংগঠনটির সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এদেশের সর্বস্তরের সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় নিরাপদ ও শান্তিতে অবস্থান করছে।

শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধি রাষ্ট্রের সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একটি দেশের সবধরনের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন সম্প্রীতি। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে এ সম্প্রীতি উত্তরোত্তর বেগবান এবং জোরালো হয়েছে। দেশি-বিদেশি চক্র বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়কে নিয়ে নগ্ন রাজনীতির পাঁয়তারা করতে চেয়েছে। কিন্তু এই নগ্ন রাজনীতির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শেখ হোসিনার অনন্য সাধারণ একটি উক্তি হলো ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সর্বজনীন ও চিরন্তন এই উক্তিটি এদেশের সর্বস্তরের জনগণকে সম্প্রীতি-সদ্ভাব-সহাবস্থানে উদ্বুদ্ধ করে। শেখ হাসিনার সময়ে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব উদযাপন করে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র এদেশের সম্প্রীতির মেলবন্ধ বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালায়। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব উগ্র ও ধর্মান্ধদের শক্ত হাতে দমন করে সম্প্রীতি সুদৃঢ়করণে বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হয়েছে। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা নির্মাণ এবং সংস্করণে উদারহস্তে শেখ হাসিনা সবসময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। এখানে বলা বাহুল্য যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে কোনো দাবি বা চাওয়া শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিকতার সাথে দেখেন এবং তা সমাধান করেন।

বঙ্গবন্ধুও তেমনই ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে সোনার বাংলা রূপান্তরে সব সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাও পিতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে জাতির পিতার ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’-কে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশে বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আস্থার ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারা জানে এদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নিরাপদ ও শান্তিতে থাকা যায়। শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে সবসময় বদ্ধপরিকর।

ধর্মান্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রীমহল যখনই এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তখনই সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। দেশবিরোধী চক্র যতই ষড়যন্ত্র করুক আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র যে অসাম্প্রদায়িকতা, সেটি তাদের গৃহীত কর্মকাণ্ডে সর্বদা প্রতিফলিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক পেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনপ্রতিনিধি স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এটিও সম্প্রীতির অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। তাই আসুন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, স্মার্ট, উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।

লেখক: ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, অধ্যাপক, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং পরিচালক, সেন্টার ফর বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ অ্যান্ড কালচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন