পিরোজপুরে এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চুইঝালের আবাদ শুরু হয়েছে। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা প্রণব কুমার হালদারের সাফল্যে কৃষকদের মাঝে নতুন রূপে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে “চুইঝাল”।
প্রতিবেশী খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে এর ব্যাপক আবাদ। স্বাদে-গুণে অনন্য এই চুইঝালের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছে।
চুইঝালের বৈজ্ঞানিক নাম (পেপার চাবা)। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার আবহাওয়া, মাটি উপযোগী হওয়ায় সকল ধরনের কৃষি চাষ ও উৎপাদনে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
বাহারি স্বাদের মসলাটি এখন উপকূলীয় অঞ্চলের পিরোজপুরের মানুষের কাছেও পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। দেখতে অনেকটা পান পাতার মত। চুইঝাল সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এর একটি গেছো চুইঝাল (গাছে বেয়ে ওঠে) ও অপরটি ঝাড় চুইঝাল (উঁচু মাটিতে বা মাচায় চাষ করা যায়)।
চুইঝালের বিশেষত্ব হল, এটি স্বাদে ঝাল, তবে ঝালটার আলাদা মাদকতা আছে। খুব তীব্র নয়, ঝাল ঝাল ভাব। এই ভাবটাই চুই খাওয়ার পর স্বাদটাকে আরও বেশি রসময় করে তোলে।
চুইঝালের উপকারিতা সম্পর্কে কৃষিবিদগণ জানান, ক্যান্সার, হৃদরোগ, গায়ে ব্যাথা, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, এ্যাজমা, অনিদ্রাসহ অসংখ্য রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।
নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের মধুভাংগা গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা প্রণব হালদার কৃষির ওপর পড়াশুনা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলের চাষাবাদের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে পতিত জমিতে ‘চুইঝালের’ আবাদ শুরু করেন গত বছরের মাঝামঝি সময়। তার কৃষি বাগান থেকে তিনি ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের চারাও বিক্রি করেন। এবছর তিনি অন্য এক উদ্যোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে ১৫ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এই চুইঝালের আবাদ করেছেন।
উল্লেখ্য, বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চুই প্রকারভেদে বাজারে বিক্রয় হয়ে থাকে। নীচে প্রতি কেজি চুই ৪শ’ টাকা থেকে ওপরে ১ হাজার বা ১৬শ’ টাকা দরে বিক্রয় হয়। তবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ২ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়।
পিরোজপুর অঞ্চলের কৃষকরা আশা করছেন, তেমন কোন খরচ নাই বিধায় আগামী দিনে চুইঝালের আবাদ আরও সম্প্রসারিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের পাশে এসে পরামর্শ এবং সরকারি প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা হলে আগামী কয়েক বছরে চুইয়ের আরও বলে তারা মনে করছেন।