‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির সভাপতি এইচ এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান।
এতে বলা হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে ‘অধিকারের’ বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নজরে এসেছে। আমরা এই প্রস্তাবে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ, এটি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা, যা অপ্রত্যাশিত ও অন্যায্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটি উল্লেখ করা জরুরি যে বিদ্যমান আইনগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করে এবং বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলা নিরপেক্ষভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন আদালত। বাহ্যিক কোনো উৎস থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো প্রভাব ছাড়াই এ রায় দেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে কাজ করছে, তা জোর দিয়ে বলা জরুরি। বিচারিক কার্যক্রম এবং নির্বাহী কার্যাবলির মধ্যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক নেই। আমরা এই রেজুলেশনটিকে আমাদের বিচার বিভাগীয় কাজে স্পষ্ট হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখি এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে এর নিন্দা জানাই। আমরা একে স্ববিরোধী মনে করি, কারণ, একদিকে বিচার বিভাগ মামলাজটের জন্য সমালোচিত হয়, অন্যদিকে, যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য এর নিন্দা করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ঢালাও ও আকস্মিক নিন্দাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার একটি মামলায় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে (এলান) দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছিল।
ওই দিনই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়। তাতে আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানানো হয়। পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।