সিলেটে বিএনপির মিছিল থেকে নাট্যকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মহানগরের কিনব্রিজ এলাকার সারদা হলে বিএনপির রোডমার্চ ও সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখানে থেকে কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। হামলায় অন্তত ১০ নাট্যকর্মী আহত হয়েছেন বলে সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ।
আহতরা হলেন- লিটল থিয়েটারের আব্দুল কাইয়ূম মুকুল, নাট্যকর্মী হুমায়ুন কবির জুয়েল, চয়ন পাল শান্ত, নাট্যকার বিভাস শ্যাম যাদন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্তের ছেলে লামানুজ গুপ্ত।
খবর পেয়ে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাট্যকর্মীরা মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তারা দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
জানা গেছে, সিলেটের ৮৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী সারদা হল দীর্ঘ ১১ বছর ধরে অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সংস্কারের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা ছিল। এ উপলক্ষে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সেখানে নাট্য পরিদর্শনের আয়োজন করেছিল। এ জন্য সংস্কৃতিকর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সেখানে ছিলেন।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বিএনপির একদল নেতাকর্মী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। এ সময় তারা নারী সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে বাধা দিলে কয়েকজন নেতাকর্মী দলবদ্ধ হয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা চালান। পরে সংস্কৃতিকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান।
হামলার খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সিটি করপোরেশন সারদা হল দেখভাল করেন। আরিফুল এ সময় দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে হামলায় বিএনপি জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন- ‘কে বা কারা হামলা চালিয়েছে জানি না। তবে বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘মামলা হয়েছে। কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তা খুঁজে বের করছে। এ জন্য পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছে।’
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রোববার মহানগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে।