প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিল্পকারখানা হচ্ছে এবং নগরায়ন হচ্ছে। এতে দেশের কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে; জমি কমে আসছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নগরায়ন পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘থার্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন আরবান অ্যান্ড রিজওনাল প্ল্যানিং’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি খাত অনেক এগিয়ে গেছে। ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান হচ্ছে। তবে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। অতীতে বাংলাদেশের শিল্পায়ন অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পায়নকে পরিকল্পনার অধীন আনার উদ্যোগ নেন। এর পথ ধরে প্রথমে তৈরি হয় ইপিজেড এবং এখন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ইকোনমিক জোন। এর মাধ্যমে দেশের মূল্যবান কৃষিজমি রক্ষার পাশাপাশি শিল্প খাতের সঙ্গে সব খাতের সমন্বয় সম্ভব হচ্ছে।’
বর্তমানে উদ্যোক্তারা নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন,
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। এখনও দেশের উপজেলা পর্যায়ে কীভাবে নগরায়ন হবে, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা হয়নি।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এতে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, যা মোকাবিলায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে নিজের তরুণ বয়সে দেখা রাজধানীর চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তরুণ বয়সে যখন বোতলের পানি কিনে খাওয়ার কথা বলতাম, তখন মানুষ অবাক হতো আর মানুষ হাসত। অথচ এখন জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও যেকোনো অনুষ্ঠানে বোতলজাত পানি থাকাটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এর ফলে প্রচুর বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। বর্তমান সরকার এই বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ নামে অভিহিত রাজধানীর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ রয়েছে। তারা সবাই নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে চায়। তারপরও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রস্তাব আমলে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন,
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে দূষণ বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপরও। শুধু প্লাস্টিকই নয়, আরও অন্যান্য মাধ্যমেও দূষণ হচ্ছে।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে সৌরবিদ্যুতের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সৌরবিদ্যুতের জন্য অনেক জমি প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে জমি দুষ্প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জার্মান দূতাবাসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফ্লোরিয়ান হলেন এবং ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান সেটেলমেন্টস প্রোগ্রামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মায়মুনাহ মোহাম্মদ শরীফ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ।