Homeসারাদেশনিউমার্কেটে দোকানে পানি ঢুকে ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ব্যবসায়ীদের দাবি

নিউমার্কেটে দোকানে পানি ঢুকে ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ব্যবসায়ীদের দাবি

বৃহস্পতিবারের (২১ সেপ্টেম্বর) ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানির বাড়তি চাপ ও ময়লা-আবর্জনায় সুয়ারেজের ড্রেন বন্ধ হয়ে রাতেই নিউমার্কেটের প্রায় ৫০০ দোকানের ভেতরে পানি ঢোকে। মার্কেটের মূল কাঠামো সড়কের তুলনায় নিচু অংশে হওয়ায় পরদিন শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) আশপাশের পানিও এসে জমা হয় এখানে। ফলে পানিতে বিভিন্ন কাপড়, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কুশন, বালিশ, লাগেজ, ক্রোকারিজসহ নানান ধরনের ব্যবহার্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। দোকানপ্রতি তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। ফলে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

আজ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা ভিজে যাওয়া মালামাল বের করছেন। পণ্যর ওপরের কাভার খুলে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনের অংশে তৈরি হয়েছে ভেজা, আধভেজা পণ্যর পসড়া। মার্কেটে ক্রেতাদের হাঁটার অংশে নষ্ট হয়ে যাওয়া মালামালের স্তূপ।

নিউমার্কের স্টেশনারি অংশ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বইয়ের দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে ভিজে গেছে শত শত বই। ভিজে যাওয়া এসব বই তারা আলাদা করছেন। কেউ বা স্তূপ সাজিয়েছেন দোকানের সামনে।

ব্যাগের দোকানগুলোতে দেখা যায়, ত্রিপলের নিচে শত শত ব্যাগ। যার প্রায় সবগুলোই ভেজা, আধভেজা। শহীদ মিনার অংশ ঘুরে দেখা যায়- দোকানিরা ভেজা কাপড় আলাদা করছেন। ভেজা কার্পেটের স্তূপ পড়ে রয়েছে দোকানের সামনে। আরও এগুতেই দেখা যায় ইলেকট্রিক দোকানগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন মালামাল পানিতে ভিজে যাওয়ায় সেগুলো তারা আলাদা করছেন।

নিউমার্কেট স্টেশনারি অংশের দোকানি মনির বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দোকান পর্যন্ত পানি চলে আসে। যতগুলো মালামাল পেরেছি ওপরে তুলেছি। রাতে পানি আরও বেড়ে যাওয়ায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মালামাল, বই পানিতে ভিজে গেছে।

মোল্লা ইলেকট্রনিক্সের সাইফ বলেন, গত দুই দিন পানিতে যে থই থই অবস্থা, এসে দেখারও সুযোগ ছিল না। দুই দিন পর দোকান খুলে দেখি ময়লা পানিতে মালামাল ভিজে একাকার অবস্থা। এ ক্ষতি কতদিন টানতে হবে জানি না।

নিউমার্কেটের দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, মার্কেট থেকে সড়ক উঁচু। বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে। রাস্তা দিয়ে যখন গাড়ি যায় পানি ঢেউ খেলে। অন্যদিকে মার্কেটের ড্রেনেজ ব্যবস্থা গত কয়েক বছর থেকে অকেজো হয়ে গেছে। মার্কেটের বৃষ্টির পানিও নামে না।

ব্যাগ দোকানি মারুফ বলেন, ব্যাগের দোকানে তো এমনিতেই হিজিবিজি অবস্থা থাকে। নিচে-উপরে সবখানেই মালামাল রাখতে হয়। পানি প্রবেশ করছে দেখেও সরানোর সময় পাইনি। অন্য কোথাও যে রাখব তারও তো উপায় নেই। বাহিরেও ছিল বৃষ্টি।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, যে সময় বৃষ্টি এসেছে তখন অধিকাংশ দোকানই বন্ধ করে সবাই বাড়ি চলে গিয়েছেন। এত বৃষ্টি হবে বা এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটি কেউ ভাবেননি। আবার নিউমার্কেট অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ার কারণে আশপাশের পানিও এখানে জমা হয়েছে। আশপাশের অন্যান্য মার্কেটগুলোর ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছিল। আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য দোকানের ডেকোরেশন নষ্ট হয়েছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট সময়ও লাগবে।

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে পানি যখন সরানো যাচ্ছিল না তখন মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের সাকশন মেশিন এনে পানি অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এখনো মার্কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। পাশাপাশি আমরা দোকানিদের সতর্ক করেছি যেন কোনোক্রমে ড্রেনে পলিথিন, ময়লা আবর্জনা না ফেলেন। যে সকল দোকান থেকে ময়লা আবর্জনা পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য মার্কেটের ড্রেন এবং চলাচলের রাস্তায় ফেলা হবে, তাদের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবমিলিয়ে নিউমার্কেটের ভেতরের ড্রেনগুলো সচল রাখলে ভবিষ্যতে আর এমন ঝামেলায় পড়তে হবে না।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন