Homeখেলাফুটবলের হাত ধরে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, ব্রাজিলের সঙ্গে এফওসি কাল

ফুটবলের হাত ধরে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, ব্রাজিলের সঙ্গে এফওসি কাল

নান্দনিক ফুটবল দিয়ে বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে ব্রাজিল। নিজেদের ফুটবলের উন্নয়নে এখন ল্যাটিনদের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি ফুটবলকে কেন্দ্র করে এবার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য সম্পর্কও বাড়াতে চায় ঢাকা। সেজন্য দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে ব্রাজিলের সঙ্গে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২ অক্টোবর) ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভা ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনে’ (এফওসি) বসছে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া দ্বিতীয় এফওসিতে আলোচনার টেবিলে থাকছে ফুটবলে সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির প্রসঙ্গ। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) অথবা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলবে ঢাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, ব্রাজিলের সঙ্গে দ্বিতীয় এফওসি হবে এটা। এফওসিতে সাধারণত দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। নতুন করে কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার মতো বিষয় থাকলে যার যার স্বার্থ বিবেচনায় সেগুলো সামনে আনার চেষ্টা করে। আর পুরোনো বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার সুযোগও থাকে।

বাংলাদেশ ট্রেড ডাইভারসিফিকশনের জন্য যে ‘প্যাকেজ ইকোনোমিক ডিপ্লোম্যাসি’ হাতে নিয়েছে, সেখানে বড় একটা জায়গা লাতিন আমেরিকা। সেখানকার অর্থনীতি বেশ বড়। বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু ও চিলি। ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের ট্যারিফ অলমোস্ট ডাবল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে ট্যারিফ দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে, তার দ্বিগুণ দিয়ে ব্রাজিলের মার্কেটে ঢুকতে হচ্ছে। ট্যারিফ রিমুভ করার জন্য এফটিএ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আলোচনায় কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে চায় বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের জবাবে এ কূটনীতিক বলেন, আমরা ব্রাজিলের সঙ্গে ফুটবলে সহযোগিতার বিষয়ে একটা চুক্তি করার চেষ্টা করছি। ফুটবল সংক্রান্ত আলোচনা থাকবে। এছাড়া আমরা বাণিজ্যে ডাইভারসিফিকেশন আনতে চাই। বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে চাই। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো ফোকাসে থাকবে। আরএমজিতে অনেক ট্যারিফ দিতে হয়, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। পিটিএ বা এফটিএ করতে চাই।

বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে ব্রাজিলের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ ব্রাজিলে প্রধানত ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম ও আরএমজি (তৈরি পোশাক) পণ্য রপ্তানি করে। আর দেশটি থেকে সয়াবিন, অপরিশোধিত চিনি ও গম আমদানি করে। পিটিএ বা এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ থাকলেও ব্রাজিল থেকে এখনও কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। তবে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে পিটিএ বা এফটিএ করার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে ঢাকা। সেজন্য এবারের এফওসি বৈঠকেও বেশ গুরুত্ব সহকারে বিষয়গুলো তুলবে ঢাকা। পাশাপাশি মার্কোসুরভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে পিটিএ চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগে সহযোগিতা করার জন্য ব্রাজিলের সহযোগিতা চাওয়া হবে।

অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড ডাইভারসিফিকশনের জন্য যে ‘প্যাকেজ ইকোনোমিক ডিপ্লোম্যাসি’ হাতে নিয়েছে, সেখানে বড় একটা জায়গা লাতিন আমেরিকা। সেখানকার অর্থনীতি বেশ বড়। বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু ও চিলি। ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের ট্যারিফ অলমোস্ট ডাবল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে ট্যারিফ দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে, তার দ্বিগুণ দিয়ে ব্রাজিলের মার্কেটে ঢুকতে হচ্ছে। ট্যারিফ রিমুভ করার জন্য এফটিএ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মাহফুজ কবির বলেন, আর দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি করতে হবে। আমরা ওদের ওখানে বিনিয়োগ করব, ওরা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করবে- এই আদলে হবে। মূল কথা হলো- বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্য করা। যত দ্রুত সম্ভব এফটিএর নেগোসিয়েশন করতে হবে। কারণ, এ সমস্ত দেশগুলো আমাদের জন্য নিরাপদ। এরা কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগী নয়। এ কারণে এফটিএ করতে পারলে আমাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা হয়ত আমাদের দেশে এতটা এক্সপোর্ট করবে না কিন্তু তাদের দেশে আমাদের এক্সপোর্ট বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কাজগুলো দ্রুত করতে হবে। সামনে আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আছে। সেজন্য আমাদের এখন থেকে বিকল্প বাজার নিশ্চিত করতে হবে।

চিলির সঙ্গে প্রথম এফওসি বৈঠক

এদিকে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ চিলির সঙ্গেও একটা এফওসি কনসালটেশন সাইন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৪ অক্টোবর চিলিতে এটি সাইন করা হবে।

ব্রাজিলের সঙ্গে দ্বিতীয় এফওসি হবে এটা। এফওসিতে সাধারণত দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। নতুন করে কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার মতো বিষয় থাকলে যার যার স্বার্থ বিবেচনায় সেগুলো সামনে আনার চেষ্টা করে। আর পুরোনো বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার সুযোগও থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার আরেক কূটনীতিক বলেন, এফওসি কনসালটেশনের পর এফওসি বৈঠকে বসবে উভয়পক্ষ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন কোন এরিয়া নিয়ে কাজ করা যেতে পারে, সেগুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে চাই আমরা। আমাদের আরএমজি পণ্য চিলিতে যায়। ওরা গ্রিন এনার্জিতে ভালো। গ্রিন এনার্জি খাতে আমরা তাদের সহযোগিতা চাই, সেজন্য ওই সেক্টরে আমাদের ফোকাস থাকবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ৪ অক্টোবর চিলির সঙ্গে এফওসি কনসালটেশন সাইন করবে বাংলাদেশ। পরদিন ৫ অক্টোবর সান্তিয়াগোতে উভয়পক্ষ সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করতে প্রথম এফওসি বৈঠকে বসবে। ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং সান্তিয়াগোর পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন