Homeজাতীয়দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষণ মিশন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষণ মিশন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন কমবেশি চারটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে। প্রশ্ন চারটি হলো—কীভাবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনা যায়? নির্বাচনের আগে-পরে কী উপায়ে কত রকম অনিয়ম হয়? কীভাবে এসব অনিয়ম রোধ করা যায়? আর যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী নির্বাচনে যদি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে হয়, তা কেমন হওয়া উচিত? এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে দুই দিন ধরে নানা মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মিশনের সদস্যরা। গতকাল সোমবার তারা বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে।

রাজধানীর বনানীতে শেরাটন ঢাকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ থেকে মিশনকে বলা হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবিধানসম্মত কোনো প্রস্তাব দেওয়া হলে ক্ষমতাসীন দলটি সমঝোতা করতে রাজি আছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমেরিকার প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস আওয়ামী লীগ করবে কি না? জবাবে তাদের বলা হয়েছে, বিএনপির সব দাবি সংবিধান বহির্ভূত। দলটি যদি সংবিধানসম্মত কোনো প্রস্তাব দেয়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমঝোতা করতে পারে।

অবশ্য বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো জায়গা নেই। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে বিএনপি সমঝোতা-আপসের কোনো পথ খোলা রাখেনি। বিএনপির দাবি সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে তো আওয়ামী লীগ সমঝোতা করবে না।

আলোচনায় বিএনপির দাবির বিষয়টি এসেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, সমঝোতা ও আপসের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না? জবাবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, সমঝোতা ও আপসের জন্য সুযোগ থাকতে হয়। সেই সুযোগ বিএনপি রাখেনি, ব্লক করে দিয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো মৃত একটি ইস্যুকে সামনে এনেছে। তাদের এক দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। এসব দাবির মুখে কীভাবে আপস হবে?

বৈঠকে নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচনী পরিবেশ, প্রশাসনের ভূমিকা, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও সাজা দেওয়া, রাজনৈতিক সুযোগ, সবার জন্য সমান সুযোগের সম্ভাবনা ও বিএনপির তোলা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চায় মার্কিন প্রতিনিধিদল। এসব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি আইনি যুক্তি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এদিকে বিএনপির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলটির আলোচনায় ঘুরেফিরে কথা একটাই এসেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তা হলো বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কি না। আর হতে হলে কী কী প্রয়োজন, কীভাবে করা যায়?

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন হতে হবে। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো ব্যবধান নেই বলে বিএনপি মনে করে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধান প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মার্কিন মিশনকে বলা হয়েছে।

ভোটের সময় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, জানতে এসেছে। সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।

গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে গতকাল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, আলোচনায় সে বিষয়ের জোর দিয়েছে। এ ছাড়া এর আগে এখানে নির্বাচনে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা নানা প্রশ্ন করেছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ভালো হয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, তা সুষ্ঠু হলো কি হলো না, তা বোঝা যায় না। তারা শেষ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে কীভাবে নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে।

বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনপদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে দলটি।

আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।

জাতীয় পার্টি এখনো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, তাঁর দল নির্বাচনে যাবে না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। অবস্থা দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব এলে জাতীয় পার্টি বিবেচনা করবে বলে জি এম কাদের উল্লেখ করেন।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন