Homeসর্বশেষআসাদ চৌধুরী তাঁর কবিতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

আসাদ চৌধুরী তাঁর কবিতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

স্মৃতির আলোয় শোকের অশ্রুভেজা এক আবেগময় আয়োজনে প্রিয় কবি ও সহকর্মী আসাদ চৌধুরীকে স্মরণ করল বাংলা একাডেমি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই স্মরণসভা হয়। সেখানে আলোচকদের অনেকে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে মূল্যায়ন আর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

৫ অক্টোবর কবি আসাদ চৌধুরী কানাডায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্মরণে বাংলা একাডেমি এই আয়োজন করে। সভার শুরুতেই কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আলোচনার সূচনা করে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আসাদ চৌধুরী আধুনিক বাংলা কবিতায় এক অনিবার্য নাম, ষাটের দশকের কবিতা আন্দোলনের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। শুধু কবিতার ক্ষেত্রেই নয়, সমকালীন বাংলা সাহিত্যে তিনি এক বহুমাত্রিক স্রষ্টা। তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি ও জনজীবন যেমন অনুপম ব্যঞ্জনায় ভাস্বর হয়ে আছে, তেমনি এ দেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্য অসাধারণ স্বতন্ত্রে ভাষারূপ পেয়েছে। তাঁর কবিতায় নতুন সুর, দেশ, দেশের ঐতিহ্য, লোকায়ত জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম সহজভাবে সমুজ্জ্বল। তিনি আধুনিকতার দুর্বোধ্যতা এড়িয়ে চলেছেন।

মহাপরিচালক বলেন, আসাদ চৌধুরী শুধু একজন অসামান্য কবিই ছিলেন না, বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের উন্মেষ পর্বেরও একজন ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা থেকে সাংস্কৃতিক যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। দেশের কয়েক দশকের শিশু–কিশোরের মধ্যে ছড়িয়েছেন ইতিহাসের দ্যুতি।

আসাদ চৌধুরীর চারিত্রিক গুণের প্রতি আলোকপাত করে মুহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন, তিনি ছিলেন বন্ধুবৎসল। সবার হিতাকাঙ্ক্ষী। অন্যের গুণ প্রচারে তিনি ছিলেন অকৃপণ। এ কারণে তিনি বহু মানুষকে আপন করে নিতে পেরেছিলেন। একাডেমির পক্ষ থেকে কবির প্রতি তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্মরণসভায় কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বাংলা একাডেমির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা অংশ নেন। কবির ছেলে আসিফ চৌধুরী ও মেয়ে নুসরাত জাহান কানাডা থেকে অনলাইনে যুক্ত হন। এ মিলনায়তনের সামনে আসাদ চৌধুরীর লেখা বইগুলোর প্রদর্শন করা হয়।

সূচনা বক্তব্যের পরেই কবিকে নিয়ে তাঁর জামাতা নাদিম ইকবালের তৈরি করা ‘মাদার টাং’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন।

কবির ছেলে আসিফ চৌধুরী সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, শেষ দিনগুলোয় তাঁর বাবা খুবই অসুস্থ ছিলেন। নিয়মিত স্যালাইন চলছিল। তিনি বলেন, বাবা চেয়েছিলেন দেশে তাঁর মৃত্যু হলে মরদেহ বাংলা একাডেমিতে যেন নিয়ে যাওয়া হয়। তা হলো না। মৃত্যুর পর বাবার মরদেহ দেশে আনা বিভিন্ন কারণে তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সে জন্য তিনি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বাবার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনার অনুরোধ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘করোনাকালে আমরা অনেক গুণী মানুষকে হারিয়েছি। এবার কবি আসাদ চৌধুরীকে হারালাম। তিনি কবি হিসেবে যেমন বড় মাপের, মানুষ হিসেবে তার চেয়ে বড় মাপের। তাঁকে যেন আমরা কোনো দিন না ভুলে যাই।’

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ কবির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘অভিবাসন মানুষের জীবনে খুব দুঃখজনক করুণ ঘটনা। তিনি তাঁর কবিতার ভেতর দিয়ে চিরকাল আমাদের হৃদয়ে জীবিত থাকবেন।’

কবির দীর্ঘদিনের সহকর্মী কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া বলেন, আসাদ চৌধুরী খুব দিলদরিয়া মানুষ ছিলেন। সবকিছুকে তিনি সহজভাবে গ্রহণ করেছেন। তাঁর কবিতাতেও এই সহজ–সাবলীলতার বৈশিষ্ট্য এসেছে। অনেক কঠিন কথা তিনি কবিতায় সহজ করে বলতে পেরেছেন।

কবি আসাদ মান্নান বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে কবি ও মহৎ মানুষেরা মারা যান না। আসাদ চৌধুরী যেমন বড় কবি, তেমনি এক মহৎ মানুষ। তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন, থাকবেন।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আসাদ চৌধুরী ছিলেন এক অসাধারণ কবি। সহৃদয় মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর কবিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।’

কবি আসাদ চৌধুরীর লেখা থেকে পাঠ করেন কবি পিয়াস মজিদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান, গবেষক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, কবি বিমল গুহ, লেখক হরষিত বালা প্রকাশক রবিণ আহসান, একাডেমির সাবেক পরিচালক জালাল আহমেদ, কবি রহিমা আক্তার, নূরুন্নাহার খানম, পরিচালক কবি সরকার আমিন, পরিচালক কবি আমিনুর রহমান সুলতান, উপপরিচালক তপন বাগচী। সঞ্চালনা করেন সায়েরা হাবিব।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন