
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যে অস্থিরতা শুরু হয়। হুট করেই বাড়তে থাকে প্রতি ডলারের দাম। ফলে ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের এই উচ্চমূল্যকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে ওঠে হুন্ডি চক্র।
সিন্ডিকেট করে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলার অপচেষ্টা করে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এমনকি এদের ডলার স্টক করার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারেও কৃত্রিমভাবে ডলারের মূল্য বাড়তে থাকে আরো, ফলে বিপাকে পড়েন আমদানিকারকরা। এলসি খোলার জন্য ধরনা দিয়েও ডলার সঙ্কটে ভূগতে থাকেন তারা। ফলে বাড়তে থাকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ঘাটতি।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আকস্মিকভাবেই ডলারের মূল্য কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ-গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন অনুসারে, ডলারের মূল্য কমালে বাজারে ডলার ছাড়তে বাধ্য হবে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সামনে আরো কমানোর আশঙ্কা থেকে স্বল্প ক্ষতিতে হলেও নিজেদের মূলধন বাঁচানোর চেষ্টা করবে তারা। একারণে ২২ নভেম্বর রাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সকাল থেকেই তা কার্যকর করছে সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২৩ নভেম্বর (২০২৩) থেকে আমদানিকারকদের জন্য ডলারপ্রতি ৫০ পয়সা কমিয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়েও ডলারপ্রতি ৫০ পয়সা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারিত হয়েছে ১১০ টাকা। তবে নতুন সিদ্ধান্তে বলা হয়, প্রবাসী আয়ে সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলার প্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন দেশে থাকা প্রবাসীর পরিজনরা। এক্ষেত্রে ডলারের দাম কমলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না প্রবাসী এবং রফতানিকারকেরা। কিন্তু বিপাকে পড়বে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।
ডলারের এই মূল্য পরিবর্তনের ফলে বাজারের ডলারের প্রবাঞ স্বাভাবিক হবে, যার প্রভাব পড়বে আমদানি বাণিজ্যের ওপর। এলসি খোলার জটিলতা দূর হবে। গতি আসবে আমদানি বাণিজ্যে। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত একই কায়দায় দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। তবে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য একটি মহলের অশুভ কার্যকলাপ দেখে, তা প্রতিরোধে ক্রমান্বয়ে ডলারের মূল্য হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।