Homeসারাদেশনাটোর জেলার প্রথম স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ ‘লুব্ধক’

নাটোর জেলার প্রথম স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ ‘লুব্ধক’

বিদ্যালয়ে যাওয়া মানেই বই, খাতা, কলম ও একগাদা বইয়ের ঝুলি। আর শ্রেণিকক্ষ বলতেই সাজানো চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ, চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের ছবি ভেসে ওঠে। এই ধারণাকে বদলে দিতে নাটোরের লালপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হয়েছে জেলার প্রথম স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ ‘লুব্ধক’।

আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিন বিদ্যালয়ের লুব্ধক নামে ওই শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ড্রোন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ রোবট, স্মার্ট মনিটর, উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেকটিভিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত অন্যান্য ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেই হাতে-কলমে অল্প সময়ের মধ্যেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত প্রাথমিক জ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষা লাভ করতে পারছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে তারা ক্লাস উপভোগ করছে।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বর্ষা জানায়, আধুনিক প্রযুক্তির শ্রেণিকক্ষ তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে। উদ্যোগটি অত্যন্ত ইতিবাচক। লুব্ধক শ্রেণিকক্ষে আনন্দের সঙ্গে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করছে তারা।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম্মা আক্তার জানায়, স্মার্ট ক্লাসরুমের মাধ্যমে তারা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাতে-কলমে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বল্প ব্যয়ে প্রস্তুতকৃত শ্রেণিকক্ষে উন্নততর প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এবং স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে উঠছে। যারা ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটির মাধ্যমে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহসান হাবিব বকুল বলেন, একটি শ্রেণিকক্ষে ‘লুব্ধক’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় শ্রেণিকক্ষটির সিলিং ও দেয়ালগুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর ছবি ও বর্ণনা দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। এই উদ্ভাবনের ফলে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের সৃজনশীল, দ্রুত চিন্তার অধিকারী ও সমস্যা সমাধানে দক্ষ প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠছে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা সুলতানা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ব্যবহার করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত, সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে ভিশন-২০৪১ ঘোষণা করেছেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও এসম্পর্কিত প্রযুক্তিগত জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, জেলার লালপুর উপজেলায় শিক্ষার্থীদের স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ‘লুব্ধক’ নামক এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী একটি শ্রেণিকক্ষ স্বল্প ব্যয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে ধারণা লাভ করতে পারছে। তাই উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে লুব্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এই বিদ্যালয়ে ‘লুব্ধক’ নামক স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ ২০২৩ সালের ১৮ মে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য উদ্বোধন করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। গত ৭ আগস্ট স্মার্ট ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাইবার সিকিউরিটি শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সামিউল আমিন।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন