Homeরাজনীতিছাত্রলীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না

ছাত্রলীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এখন নাকি তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। নির্বাচন তাদের উদ্বেগের বিষয় নয়।

জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে তারা আবারও ছিনিমিনি খেলতে চাইছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় শেখ হাসিনা সরকারের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে এবং সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব পালনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে; জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না।

তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।’

 

ছাত্রলীগের তারুণ্যের শক্তিই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সব সময় অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে, সেটাই আমি তোমাদের কাছে চাই। শুধু ২০৪১ সালেই থেমে থাকবে না, ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি। সেই নীতি মেনেই ছাত্রলীগকে চলতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের তারুণ্যের শক্তিই একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। ছাত্রলীগ যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

’বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনগণকে মনে করিয়ে দেবে, ওরা তো ভোট করতে আসে না, ভোট চায় না, ভোট পায় না। ওরা তো ভোট পাবে না। কারণ ওরা তো লুটেরা, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী, মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়, মানুষের সম্পদ কেড়ে নেয়।’

হিলারি বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ব্যাংকের এমডি, সেটাও সরকারি বেতনধারী। আইনে আছে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারবে, তার বেশি থাকতে পারবে না। তার পরও ১০ বছর বেআইনিভাবে চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশ, তারাও আমাদের বারবার চাপ দিত। বলত, এমডি পদে না রাখলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তার বয়স কমাতে পারেনি। সে মামলায় হেরে যায়। তার পরই তার বিদেশি বন্ধু হিলারি ক্লিনটন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যান মি. জোয়েলিককে দিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে। তখন আমি বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, কারো কাছে হাত পেতে নয়। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি, বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশের মানুষ পারে। এর পরই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।’

যারা উন্নয়ন দেখে না তারা চক্ষু ইনস্টিটিউটে চোখ দেখাতে পারে

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে, যাদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা দেশের উন্নতির কিছুই দেখে না। যারা এমন অন্ধ, আমাদের উন্নয়ন দেখে না, তাদের বলব, ১০ টাকায় টিকিট কেটে চক্ষু ইনস্টিটিউটে চোখ দেখাতে। আসলে তাদের মনের দরজায় অন্ধকার। তারা পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন তারা দেখে না। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন তাদের পছন্দ নয়। হাওয়া ভবন খুলে হাওয়া খেতে পারছে না বলে তাদের মনে দুঃখ।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই চক্রান্ত শুরু হয়। স্বাধীনতা যাতে নস্যাৎ হয়, সেই চেষ্টাই করেছিল কিছু লোক। কোনো সময় দেয়নি। এক শ্রেণি ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছিল। লুট করা, থানায় আগুন দেওয়া—এসব কাজ করছিল কিছু মানুষ।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমাদের নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য আমাদের সরবরাহ না করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেই কথাটা মাথায় রেখে আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন করব। আমাদের খাদ্য উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি। আমাদের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’

তরুণদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছেলেমেয়েদের বলব, তোমরা উদ্যোক্তা হতে পারো। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দেওয়া হয়েছে, সারা বাংলাদেশে ওয়াই-ফাই কানেকশন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষপণ করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আমাদের ছেলেমেয়েরা লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করতে পারে।’

বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি পাঠ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের সঠিক নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে। চাকরি, ব্যবসা যে যেখানে কাজ করবে সেখানে যেন সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে, সেটা আমরা চাই।’

সর্বজনীন পেনশন নিয়ে বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে ছাত্রলীগকে

সর্বজনীন পেনশন নিয়ে বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। দেখলাম, বিএনপির কিছু নেতা বললেন, এটা নাকি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। নিজেরা কিছু করতে পারে নাই, মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই, মানুষের ভালোর জন্য এখন আমরা কাজ করছি, সেটা নিয়েও তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এই বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেয়।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখা, অনাবাদি জমি চাষের ব্যবস্থা করা, গাছ লাগানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্মরণসভায় বক্তব্য দেন।

স্মরণসভা শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল ৩টা। তবে দুপুরের আগ থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। সারা দেশ থেকে বাস ও ট্রেনে করে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। বিকেল ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা নিজেদের স্থানে দাঁড়িয়েই স্লোগান দিতে থাকেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার কিছু পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্মরণসভা শুরু হয়। ছাত্রলীগের শিল্পীরা জাতীয় সংগীত, দলীয় সংগীত ও অন্য গান পরিবেশন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে লড়তে শপথ পাঠ করান ছাত্রলীগের সভাপতি।

স্মরণসভায় অংশ নিতে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হন। দুপুরের মধ্যেই শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা খণ্ড খণ্ড মিছিলে ভরে যায়। বিকেলের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলও পূর্ণ হয়ে যায়। আয়োজকদের দাবি, গতকালের স্মরণসভায় পাঁচ লাখের বেশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।

অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র  চলছে : ওবায়দুল কাদের

স্মরণসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারও অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেব না।’

তিনি বলেন, ‘আজ দেশে-বিদেশে কত ষড়যন্ত্র, কত চক্রান্ত! তারা জানে, এই দেশে ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনে আমাদের হারাতে পারবে না। সে জন্য ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে। নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি প্রয়োগ করতে চাইছে।’

শামীম ওসমানের নির্দেশে সমাবেশে ৩০ হাজার নেতাকর্মী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের নির্দেশে ঢাকায় ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশে ৩০০ বাসে এবং বিভিন্নভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘আমরা বরাবরের মতো এবারও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানের নির্দেশে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম।

 

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন