Homeসর্বশেষতিস্তার পানি বৃদ্ধি, ৫ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি...

তিস্তার পানি বৃদ্ধি, ৫ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে গাইবান্ধায় তিস্তা নদী এলাকায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ক্ষতি কমাতে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়। বিকেল থেকে জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পূর্বাভাস ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মাইকিং করছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হতে পারে। একইসঙ্গে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, আগাম বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ায় তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে জনগণের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বন্যা মোকাবেলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা অববাহিকার মানুষজনকে নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। পাউবো এবং স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, এটি ভয়াবহ বন্যার রূপ নিতে পারে। এই সতর্কবার্তা তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলার ১২ উপজেলার প্রশাসন মাইকিং করে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষজনকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপদে সরিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।

সন্ধ্যার পর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়া, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পনি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ফলে তিস্তা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে এরই মধ্যে পানি উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে সর্বোচ্চ পানিসমতলের (৫২ দশমিক ৮৪ মি.) কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

উত্তরাঞ্চলীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্যারেজের ৪৪টি জল কপাট খুলে দিয়ে চাপ সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বুধবার মধ্যরাতের মধ্যেই তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর পর্যন্ত উঠতে পারে।

এদিন বুধবার রাত ১০টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি এই পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৫টায় তা বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৭টা ও ৮টায় পানি বেড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও রাত ৯টায় পানি কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ রাত ৯টা থেকে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, সর্বশেষ রাত ৮টার তথ্যনুযায়ী তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি সমতলে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি. নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টের পানি সমতল আগামী ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়ে পরবর্তীতে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন