Homeজাতীয়রূপপুরে পৌঁছাল ইউরেনিয়ামের সপ্তম চালান

রূপপুরে পৌঁছাল ইউরেনিয়ামের সপ্তম চালান

ইউরেনিয়ামের সপ্তম চালান পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছেছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার (১০ নভেম্বর ) ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া গোল চত্বর পার হয়ে ৭টা ৩০ মিনিটে রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছায়।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িকে ঘিরে মহাসড়কে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়ক পথে ইউরেনিয়াম রূপপুরে নিয়ে আসা হয়। সড়কে যানজট তৈরির সম্ভাবনা এড়াতে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়ি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাশিয়া থেকে সপ্তম চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছায় ২৯ সেপ্টেম্বর, পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় চালান ৬ অক্টোবর, তৃতীয় চালান ১৩ অক্টোবর, চতুর্থ চালান ২০ অক্টোবর, পঞ্চম চালান ২৭ অক্টোবর, ষষ্ঠ চালান ৩ নভেম্বর রূপপুরে পৌঁছায়।

গত ৫ অক্টোবর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পথে পা দেয় এবং দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ ক্লাবে পদার্পণ করে।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যথাক্রমে এই কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন।

১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটটি আগামী বছর চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রূপপুরে দুটি চুল্লিতে ৩২৬টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলির মধ্যে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি থাকবে। চুক্তি মোতাবেক প্রথম তিন বছরের এই জ্বালানি আসবে রাশিয়া থেকে। প্রতি ১৮ মাস পরপর এক-তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে।

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সেবা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তৈরি হচ্ছে ছয়টি হাইভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন। ৪০০ কেভি ক্ষমতার ৬৪৮ সার্কিট কিলোমিটার আর ২৩০ কেভি ক্ষমতার ৪৪৬ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এসব লাইনের ১৬ সার্কিট কিলোমিটার তৈরি হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা আর যমুনা পাড়ি দিয়ে। সঞ্চালন লাইন তৈরি করা সরকারি প্রতিষ্ঠান পিজিসিবির সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অবকাঠামোগত অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৮৬ শতাংশ।

প্রকল্পের লক্ষ্য এবং সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, আগামী বছর রূপপুরের প্রথম ইউনিট উৎপাদন উপযোগী হলে মিলবে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর পরের বছর থেকে পুরোদমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট জোগান দিতে সক্ষম হবে রূপপুর।

সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই উৎপাদনে যাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। রাশিয়া থেকে আমদানি করা ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামসহ পরমাণু চুল্লির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে এপ্রিল পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ইউনিট-১ থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন